বুধবার ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৫ - ১১:১৩
মুসলিমরা ঐক্যবদ্ধ হলে ইসরাইল গাজায় গণহত্যা চালাতে ও প্রকাশ্যে ‘গ্রেটার ইসরাইল’ ঘোষণার সাহস পেত না

হুজ্জাতুল ইসলাম ওয়াল মুসলিমিন মাওলানা আমজাদ হোসেন বলেছেন, মুসলিমরা যদি সত্যিকার অর্থে ঐক্যবদ্ধ হয়ে বিভেদ এড়িয়ে চলত, তবে জায়নিস্টরা কখনো গাজা কিংবা অঞ্চলের অন্য কোথাও এমন নৃশংসতা চালাতে পারত না। এমনকি তারা প্রকাশ্যে অন্য দেশ দখলের মাধ্যমে কথিত ‘গ্রেটার ইসরাইল’ প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেওয়ার সাহসও পেত না।

পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.), ইমাম জাফর সাদিক (আ.)-এর জন্মবার্ষিকী ও আন্তর্জাতিক ইসলামী ঐক্য সপ্তাহ উপলক্ষে হাওজা নিউজ এজেন্সি’কে দেয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেন বিশিষ্ট ইসলামি বিশ্লেষক, বাংলাদেশ শিয়া  উলামা সোসাইটির জনসংযোগ ও যোগাযোগ সম্পাদক হুজ্জাতুল ইসলাম ওয়াল মুসলিমিন মাওলানা আমজাদ হোসেন।

সম্মানিত পাঠকদের তার সাক্ষাৎকারের সারাংশ তুলে ধরছি:

ঐক্যের অপরিহার্যতা
তিনি বলেন, “মুসলিমদের নিজেদের অধিকার, সার্বভৌমত্ব রক্ষা এবং ইসরাইলি বর্বরতা ঠেকাতে ‘এক হাত’ হয়ে কাজ করতে হবে। যদি আমরা সত্যিই রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর অনুসারী হই, তবে আমাদের ঐক্য ও সংহতির মাধ্যমে জায়নিস্ট শাসনকে রুখতে হবে, যাতে তারা আর প্রকাশ্যে মুসলমানদের রক্ত ঝরাতে না পারে।”

তিনি আরও উল্লেখ করেন, ইসলামের নবী (সা.) গোত্র ও সম্প্রদায়ের মধ্যে ভ্রাতৃত্ব ও সংহতিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছিলেন। আজ মুসলমানদেরও সেই উত্তরাধিকার রক্ষা করতে হবে।

বিভেদই মূল সংকট
মাওলানা আমজাদ হোসেন বলেন, সমস্যার মূল শত্রু শুধু ইসরাইল বা যুক্তরাষ্ট্র নয়; বরং মুসলমানদের ভেতরের বিভেদই সবচেয়ে বড় বিপদ। “যদি ইসলামী সমাজ ঐক্যবদ্ধ থাকত, তবে কোনো শক্তিই মুসলমানদের অধিকার লঙ্ঘনের সাহস পেত না। বিজয়ের একমাত্র পথ হলো ঐক্য।”

পশ্চিমাদের দ্বিচারিতা
তিনি পশ্চিমা দেশগুলোর ভণ্ডামির তীব্র সমালোচনা করে বলেন, “তারা ইসলামী সমাজের ক্ষুদ্রতম পদক্ষেপকেও মানবাধিকার লঙ্ঘন হিসেবে প্রচার করে। অথচ নিজেরা নারী, শিশু ও বৃদ্ধদেরও রেহাই দেয় না; গণহত্যা চালায়। তারা প্রকৃত অর্থে মানবাধিকারকে তাদের স্বার্থ আদায়ের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে। আমাদের অভ্যন্তরীণ বিভেদই তাদের অস্ত্র বিক্রি ও মুসলিম দেশগুলোকে লুণ্ঠনের সুযোগ দেয়।”

ঐক্যের শক্তি: অতীত ও বর্তমান শিক্ষা
ইরানের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইলের যৌথ ১২ দিনের যুদ্ধের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, “তাদের পরিকল্পনা ব্যর্থ হয়েছিল ইরানের ঐক্য ও প্রতিরোধের কারণে। ইরানের হাতে ছিল শক্তিশালী মিসাইল, ছিল সাহসী যোদ্ধা, কিন্তু সবচেয়ে বড় শক্তি ছিল ইসলামী সমাজের ঐক্য, যা শত্রুকে হতাশ করেছিল।”

তিনি জোর দিয়ে বলেন, আজ যদি মুসলমানরা একত্রিত হত, তাহলে শুধু ইসরাইল নয়— ইসলামের কোনো শত্রুই ইসলামি রাষ্ট্রগুলোর বিরুদ্ধে আগ্রাসন বা অপরাধ করার সাহস পেত না।

ঐক্য ও ভ্রাতৃত্ব স্থাপনে আলেমদের গুরুদায়িত্ব
সাক্ষাৎকারে তিনি মুসলিম দেশগুলোকে ইসরাইলি অপরাধের নিন্দা জানানোর পাশাপাশি আরও শক্তিশালী ও বাস্তব পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান। একইসাথে মুসলমানদের মধ্যে ঐক্য ও ভ্রাতৃত্ব গড়ে তুলতে আলেমদের দায়িত্বের কথা স্মরণ করিয়ে দেন। তার ভাষায়, “ইসলামী উম্মাহর মর্যাদা ও সম্মান রক্ষা করা আমাদের সবার, বিশেষত আলেমদের ওপর অর্পিত গুরুদায়িত্ব।”

আপনার কমেন্ট

You are replying to: .
captcha